গোয়েন্দা অধিরাজ সিরিজ | লেখক – সায়ন্তনী পূততুন্ড, প্রকাশক – বিভা পাবলিকেশন
সর্বনাশিনী – মৃত্যুর আগেই ফেসবুকে ফোরকাস্ট হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তির নাম। খুনি ওরফে সর্বনাশিনী – একজন গভীর জলের মাছ। সিআইডি অধিরাজ ও তার টিম কিভাবে ছলে-বলে-কৌশলে খুনিকে ধরল, তাই নিয়েই গল্প। প্রথম দিকটা মনে হল প্রচুর অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করে পাতা বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। থ্রিলার শুরু হবার আগেই কমিক রিলিফের ব্যবহারটাও মাত্রাতিরিক্ত লেগেছে। তবে পূর্বে ঘটা প্রতিটা ঘটনার সাথে সর্বনাশিনীর যোগসূত্রটা ভালোভাবেই বেঁধেছেন লেখিকা। অর্ধেক উপন্যাসের পর থেকে শেষ পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা – যা বই থেকে পাঠককে আলাদা হতে দেয় না। নায়ক অধিরাজ-কে পারফেক্ট মানুষ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তাই মাঝে মাঝে তাকে অতিমানবও মনে হয়। আরেকটা জিনিস পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, সাদা মনের প্রশ্ন – লেখিকার প্রেমিক কি সত্যিই কোনো ফরেন্সিক এক্সপার্ট? 😁 মানে… টেকনিক্যাল টার্ম, ফরমালিটিজ, বিষ, ড্রাগ – এইসব ব্যাপারে তার জ্ঞান এর ছাপ পাওয়া যায় লেখায়। উপন্যাস শেষ হতে হতে আবার সিরিজের পরবর্তী খণ্ডের খোঁচাও দিয়ে যান লেখিকা। বইটি বেশ সুখপাঠ্য।
চুপি চুপি আসছে – বত্রিশ বছর পর রি-ওপেন হয়েছে একটি সিরিয়াল কিলিং কেস্। সে’বার খুনি এক এক করে পাঁচ জন শক্তিশালী পুরুষের মাথা কেটে থানার সামনে ফেলে দিয়ে যায়। খুনি ধরাও পড়ে এবং শাস্তিস্বরূপ হাজতবাসও হয়। কিন্তু খুনির ছেলে বড় হয়ে আবার মামলা করে বাবাকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। একই সাথে ফিরে আসে বত্রিশ বছর আগের সেই ‘সার্জিকাল স’ কিলার, অর্থাৎ আবার খুন হতে থাকে মানুষ। এবার এই কেস গিয়ে পড়ে সিআইডি অফিসার অধিরাজ ব্যানার্জির হাতে।উপন্যাসটি গোয়েন্দা অধিরাজ সিরিজের একটি অংশ, এবং সর্বনাশিনীর ঠিক পরের ঘটনা।গল্পের শুরু থেকেই একটা টানটান সাসপেন্স বজায় রেখেছেন লেখিকা। প্রতিটা ঘটনার বিবরণ এতটাই সুন্দর এবং স্পষ্টভাবে দেওয়া যে, পাঠক হিসেবে আমি পাতার পর পাতা যতই এগিয়েছি ততই যেন নিজেই জড়িয়ে পড়েছি গল্পের সাথে। গল্পে সমকামীদের (বিশেষত ছেলেদের) চাওয়া-পাওয়া এবং প্রতিবন্ধকতা নিয়ে মনস্তাত্ত্বিক আলোচনা ও বিশ্লেষণ হয়েছে অনেকটা জায়গা জুড়ে। মূলত তাদের প্রতিবন্ধকতা কী রূপ ধারণ করতে পারে – তা নিয়েই এই উপন্যাস। তবে, অর্ধেক উপন্যাস শেষ হবার আগে পর্যন্ত লেখিকা খুনি সম্পর্কে এত হিন্ট দিয়েছেন যে, গোয়েন্দাসুলভ পাঠকেরা একটা ধারণা করেই নিতে পারবেন ‘কে আসল খুনি’। তবে একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত উনি প্যাঁচ কষাতে ছাড়েননি। একসময় আমারও মনে হয়েছিল ‘তাহলে কি আমার প্রেডিকশন ভুল বেরোলো!’একটা জিনিস আমার বিরক্তিকর লেগেছে, সেটা হল – মূল চরিত্র অধিরাজ একসময় মানসিক অবসাদে চলে যায়। সেই জায়গাটা যেন একটু জোর করে টেনে টেনে বড় করা হয়েছে। মোটের উপর ‘চুপি চুপি আসছে’ পাঠকদের খারাপ লাগবে না আশা করি। বিশেষত গল্পের ডিটেইলিং পাঠকদের ধরে রাখবে।
2 thoughts on “বই রিভিউ | গোয়েন্দা অধিরাজ সিরিজ | লেখক – সায়ন্তনী পূততুন্ড”